Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ২৮ নভেম্বর ২০২২

বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড

 

১৮.০ ভূমিকা:

হস্তচালিত তাঁত শিল্প বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ কুটির শিল্প। জাতীয় অর্থনীতিতে তাঁত শিল্পের ভূমিকা অপরিসীম। ২০১৮ সালের তাঁত শুমারি অনুযায়ী তাঁত শিল্পে বছরে ৪৭.৪৭৪ কোটি মিটার কাপড় উৎপাদিত হয়, যা দেশের বস্ত্র চাহিদার প্রায় ২৮ ভাগ পূরণ করে থাকে। জাতীয় অর্থনীতিতে মূল্য সংযোজনের দিক দিয়ে তাঁত শিল্প খাতের অবদান ২২৬৯.৭০ কোটি টাকা। জিডিপিতে তাঁত শিল্প খাতের অবদান ০.১০%। বর্তমানে এ শিল্পের সাথে তাঁতিসহ প্রত্যক্ষভাবে প্রায় নয় লক্ষ লোক নিয়োজিত রয়েছে। এছাড়াও ডিজাইনার, তাঁত ব্যবসায়ী, তাঁত উদ্যোক্তা, তাঁতে সুতা, রং ও রসায়ন সরবরাহকারী, আমদানি ও রপ্তানিকারকসহ বিপুল পরিমাণ জনগোষ্ঠী পরোক্ষভাবে এ শিল্পের সাথে জড়িত রয়েছে। ফলে কর্মসংস্থানের দিক দিয়ে এর স্থান কৃষি ও গার্মেন্টস শিল্পের পরেই তৃতীয় বৃহত্তম এবং গ্রামীণ কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে কৃষির পরে দ্বিতীয় বৃহত্তম। গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এবং মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে তাঁত শিল্পের ভূমিকা অনন্য। ২০১৮ সালে দেশব্যাপী পরিচালিত তাঁত শুমারি অনুযায়ী দেশে বিদ্যমান ১,১৬,১১৭টি তাঁত ইউনিটে মোট হস্তচালিত তাঁতের সংখ্যা ২,৯০,২৮২টি। তন্মধ্যে চালু তাঁতের সংখ্যা ১,৯১,৭২৩টি এবং বন্ধ তাঁতের সংখ্যা ৯৮,৫৫৯টি। বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড হতে প্রকাশিত মাসিক/বার্ষিক ব্যবস্থাপনা তথ্য প্রতিবেদনে তাঁত শিল্পের তথ্য, এ শিল্পের সার্বিক কর্মকান্ড এবং বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের অধীনে পরিচালিত প্রকল্প এবং প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যক্রমের বিবরণ সন্নিবেশ করা হয়। প্রতিবেদনে সন্নিবেশিত তথ্য উপাত্ত তাঁত শিল্পের উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ কার্যক্রম গ্রহণে সহায়ক হবে।

 

১৮.০১  বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের পরিচিতি:

 

তাঁত শিল্পের মানোন্নয়নে ১৯৭২ সাল থেকেই বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁত শিল্পের উন্নয়নে ছিলেন গভীরভাবে আগ্রহী। তখন সমবায় সমিতি, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের ওপর এ দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক এ উদ্যোগ তেমন সফল না হওয়ায় লক্ষ্য অর্জনে ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। দেশের লক্ষ লক্ষ গরিব ও নিঃস্ব তাঁত শিল্পীদের স্ব-পেশায় নিয়োজিত রেখে তাঁদের নিয়মিত প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ ও সেবা প্রদানের ব্যবস্থা রেখে, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রদান ও আধুনিক লাগসই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পেশাগত দক্ষতা ও উৎপাদন বৃদ্ধি নিশ্চিত করা এবং উৎপাদিত দ্রব্য সামগ্রীর সুষ্ঠু বাজারজাতকরণে সহায়তা দান ও তাঁদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় প্রদত্ত গুরুত্বানুসারে ১৯৭৭ সালের ৬৩ নং অধ্যাদেশ বলে বাংলাদেশ হ্যান্ডলুম বোর্ড (বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড-বাতাঁবো) গঠিত হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে ২০১৩ সনের ৬৪ নং আইন অনুসারে Bangladesh Handloom Board Ordinance, 1977 রহিত ক্রমে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড পুনর্গঠিত হয়।

 

১৮.০২  বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের ভিশন:  শক্তিশালী তাঁত খাত।

১৮.০৩  বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের মিশন: তাঁতি অথবা তাঁত শিল্পী, তাঁত উদ্যোক্তা, তাঁত সহযোগী এবং তাঁত পেশায় আগ্রহীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি, চলতি মূলধন যোগান, গুণগত মানসম্পন্ন তাঁত বস্ত্র উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণের সুবিধা সৃষ্টির মাধ্যমে তাঁত খাতের সম্প্রসারণসহ তাঁতিদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন।

১৮.০৪  তাঁত শিল্প খাতের লক্ষ্য/উদ্দেশ্য:

  • তাঁত পণ্যের উৎপাদন ও গুণগতমান বৃদ্ধিতে সহায়তাকরণ;
  • মানব সম্পদ উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি;
  • তাঁত শিল্পের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কার্যক্রম জোরদারকরণ;
  • তাঁত বস্ত্রের বাজার সম্প্রসারণে সহযোগিতা প্রদান;
  • তাঁতিদের উন্নয়নে আর্থিক সহায়তা ও প্রণোদনা প্রদান।

 

১৮.০৫ তাঁত শিল্পের লক্ষ্য/উদ্দেশ্য অর্জনের কৌশলসমূহ:                                         

  • দেশের তাঁত অধ্যুষিত এলাকায় বেসিক সেন্টার স্থাপন, প্রশিক্ষণ কর্মসূচি সম্প্রসারণ, উৎপাদন উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ তাঁত বস্ত্রের সুষ্ঠু বিপণন ব্যবস্থা গড়ে তোলা;
  • ভোক্তার চাহিদানুযায়ী ডিজাইন তৈরি এবং তা হস্তচালিত তাঁতে উৎপাদিত বস্ত্রে প্রয়োগের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ;
  • তাঁত বোর্ড কর্তৃক “তাঁত বস্ত্রের উন্নয়নে ফ্যাশন ডিজাইন ইনস্টিটিউট, বেসিক সেন্টার ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন”;
  • তাঁত শিল্প খাতের সম্প্রসারণের মাধ্যমে গ্রামীণ আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য হ্রাসকরণের লক্ষ্যে বন্ধ তাঁতসমূহ চালু করার নিমিত্ত প্রয়োজনীয় চলতি মূলধন সরবরাহের ব্যবস্থা করা;
  • সুতা, রং ও রাসায়নিক আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদান;
  • তাঁত শিল্পের উন্নয়নে নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা;
  • তাঁত বস্ত্রের বাজার সম্প্রসারণের জন্য দেশে ও দেশের বাইরে বিভিন্ন স্থানে তাঁত বস্ত্র মেলার আয়োজন করা।

১৮.০৬  বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের কার্যাবলি:

  • হস্তচালিত তাঁত শিল্পের জরিপ, শুমারি এবং পরিকল্পনা বা যৌক্তিক প্রবৃদ্ধি বিষয়ক কার্যক্রম গ্রহণ;
  • হস্তচালিত তাঁত শিল্প সংক্রান্ত পরিসংখ্যান সংরক্ষণ;
  • হস্তচালিত তাঁত শিল্প সংক্রান্ত তদন্ত ও অনুসন্ধান পরিচালনা;
  • হস্তচালিত তাঁত শিল্পের ইউনিটসমূহের উন্নয়ন ও উপদেশমূলক সেবা প্রদান;
  • হস্তচালিত তাঁত শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টদের জন্য ঋণ সুবিধাদি সৃষ্টি;
  • তাঁতি সমিতিসমূহের সহায়তায় হস্তচালিত তাঁত শিল্পের উন্নয়ন;
  • তাঁতি সমিতিসমূহের মাধ্যমে তাঁতিগণকে বস্ত্র রসায়ন, খুচরা যন্ত্রাংশ, সুতা ইত্যাদি ব্যবহারযোগ্য দ্রব্যাদি ন্যায্য মূল্যে সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহণ;
  • তাঁতি সমিতিসমূহের মাধ্যমে হস্তচালিত তাঁতশিল্পসমূহকে কাঁচামাল সরবরাহ ও তাহাদের নিকট হইতে উৎপাদিত পণ্যাদি ক্রয়পূর্বক গুদামজাতকরণের উদ্দেশ্যে গুদামসমূহের রক্ষণাবেক্ষণ এবং সকলের জন্য নকশা, সুতা তৈরি, ব্লিচিং, রংকরণ, ইস্ত্রি করা, ছাপা ও ফিনিশিং এর সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা গ্রহণ;
  • দেশের অভ্যন্তরে বিক্রয় ও বিদেশে রপ্তানির নিমিত্ত হস্তচালিত তাঁতজাত দ্রব্যাদির নির্দিষ্ট মান প্রমিতকরণের জন্য উন্নয়ন ও সম্প্রসারণমূলক সুযোগ-সুবিধা এবং দ্রব্যাদির গুণগত মান ও প্রস্তুতকারী দেশ সম্পর্কিত সনদপত্র প্রদান;
  • দেশে ও বিদেশে তাঁতপণ্য জনপ্রিয় করার উদ্দেশ্যে প্রচার ও প্রচারণামূলক কার্যক্রম গ্রহণ;
  • তাঁতি সমিতিসমূহের মাধ্যমে তাঁতজাত পণ্য দেশে ও বিদেশে বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ;
  • তাঁতি ও তাঁত শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ সুবিধা প্রদান এবং উহার উন্নয়ন;
  • তাঁতিদের বয়নপূর্ব এবং বয়নোত্তর সুযোগ-সুবিধা প্রদানের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন; এবং
  • বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের  আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে বোর্ড কর্তৃক প্রযোজনীয় বিবেচিত বা সরকার কর্তৃক নির্দেশিত কোন কার্যসম্পাদন ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন।

১৮.০৭  বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের নেটওয়ার্কসমূহ:

  • দেশব্যাপী তাঁত শিল্পীদের সেবা প্রদানের জন্য ৩৫টি বেসিক সেন্টার, (৩টি সাব বেসিক সেন্টারসহ);
  • ১টি তাঁত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (নরসিংদী);
  • ১টি ফ্যাশন ডিজাইন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (নরসিংদী)।
  • ২টি তাঁত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (সিলেট ও রংপুর);
  • ৩টি ফ্যাশন ডিজাইন প্রশিক্ষণ উপকেন্দ্র (কালিহাতী, টাঙ্গাইল; বেলকুচি, সিরাজগঞ্জ এবং কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার)।
  • ১টি তাঁত প্রশিক্ষণ উপকেন্দ্র (বেড়া, পাবনা);
  • ১টি বস্ত্র প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র (সিপিসি), মাধবদী, নরসিংদী;
  • ২টি টেক্সটাইল ফ্যাসিলিটিজ সেন্টার (শোভারামপুর,কুমিল্লা এবং শাহজাদপুর-সিরাজগঞ্জ);
  • ২টি সার্ভিসেস এন্ড ফ্যাসিলিটিজ সেন্টার (কুমারখালী, কুষ্টিয়া এবং বাঞ্ছারামপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া)।